ওয়েব ডেভেলপার হবেন কিভাবে? ক্যারিয়ার গড়ার সঠিক এবং বিস্তারিত গাইডলাইন


এক হিসেব অনুযায়ি, প্রতি মাসে প্রায় ১মিলিয়ন ওয়েবসাইট অনলাইনে যুক্ত হচ্ছে। কথার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস ইল্যান্সের নিচের দেওয়া লিংকে প্রবেশ করি। https://www.elance.com/trends/skills_central এ লিংকে পাওয়া যাবে, বর্তমানে ইল্যান্সে কোন কাজ কি পরিমানে আছে। সেখানে প্রথমেই দেখা যাচ্ছে ওয়েবপ্রোগ্রামিং সম্পর্কিত কাজ।

  • সেখানে কাজের চাহিদা অনুযায়ি রিপোর্ট করা ১ম ৫টি কাজের লিস্ট দিচ্ছি।
  • web programming 
  • article writing
  • php
  • html
  • graphics design
উপরের লিংকে প্রবেশ করলেই কথার সত্যতা পাবেন এক্ষেত্রে মজার বিষয় হচ্ছে কাজ সবচাইতে বেশি ওয়েব প্রোগ্রামিং সম্পর্কিত হলেও সারাবিশ্বে ওয়েব প্রোগ্রামিং জানা লোক গ্রাফিক ডিজাইনার কিংবা এসইও জানাদের তুলনায় অনেক কম আর এ বিশাল গ্যাপটির সত্যতা চোখে পড়ে যখন ওডেস্ক কিংবা ইল্যান্স এ সম্পর্কিত জব অফারগুলো দেখি একটা এসইও সম্পর্কিত জব কিংবা গ্রাফিকস সম্পর্কিত কাজের জন্য যত আবেদন জমা পড়ে ওয়েবপ্রোগ্রামিং সম্পর্কিত কাজের জন্য তার তুলনায় অনেকগুন কম কাজ পড়ে যেখানে কাজ সবচাইতে বেশি কিন্তু কাজ করার জন্য আবেদন পড়ে অনেক কম, সেখানে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনাটা অনেক সহজ হবে, এটা খুব সহজেই বুঝতে পারি।
  • ওয়েবডিজাইনার হতে হলে কি কম্পিউটার সায়েন্স থেকে পাশ হতে হবে?
আমাদের সমাজের মধ্যে অনেকগুলো ভুল ধারনার মধ্যে এটিও একটি ভুল ধারণা। প্রকৃতপক্ষে বাহ্যিকভাবে দেখলে  কম্পিউটার সায়েন্স থেকে পাশ করা স্টুডেন্টদেরই বেশি সফল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বেশিরভাগ ওয়েবডেভেলপমেন্ট সম্পর্কিত অফিসগুলোতে গেলেই যে তথ্য পাওয়া যায়, সেখানে দেখা যায় ৯০% ওয়েবডেভেলপারের এডুকেশন ব্যাকগ্রাউন্ড ভিন্ন আশাকরি উপরের ঘটনাটি দিয়ে বোঝাতে পেরেছি, ওয়েবডিজাইনার হতে হলে কম্পিউটার সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ড থাকার প্রয়োজন নাই।

  • ওয়েবডেভেলপার হতে হলে কি করতে হবে? 

এজন্য প্রয়োজন  প্রচুর ধৈয্য, পরিশ্রম করার মনমানসিকতা, সঠিক গাইডলাইনসহ প্রশিক্ষণ। আর নিশ্চিত সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য একটু কষ্ট করতে, সাধনা করতে সবারই প্রস্তুত থাকার মনমানসিকতা না থাকলেতো জীবনটাকে সুখের করা সম্ভবনা। ২০হাজার টাকার চাকুরীর জন্য যদি জীবনের ৩০টি বছর পরিশ্রম করতে পারেন, তাহলে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে  ৭০-৮০ হাজার টাকার আয়ের জন্য মাত্র ৬মাস ভালভাবে পরিশ্রম করবেননা কেন? কিংবা এ পরিমাণ আয়ের জন্য এটুকু কষ্ট করতে যদি না চান, তাহলে স্বপ্নটা মনের মধ্যেই থেকে যাবে। আমরা অন্যব্যক্তির আউটসোর্সিংয়ের আয় দেখে লোভ কিংবা আফসোস করি। আমাদের উচিত তাদের আয়কে লোভ না করে তারা কি পরিমাণ পরিশ্রম, কিংবা ত্যাগ স্বীকার করেছে এটুকু পযায়ে আসার জন্য, সেই বিষয়টাকে লোভ করা। টাকার পিছনে না ছুটে, যোগ্যতা তৈরির জন্য দৌড়াতে হবে। যোগ্যতা যখন তৈরি হবে, তখন দেখবেন টাকা আপনার পিছু ছুটবে।

  • একজন ওয়েবডিজাইনারের আয় কিরকম হতে পারে?
একজন ওয়েবডিজাইনার ওয়েবসাইট লেআউট তৈরি, থিম তৈরি, এবং কোডিং করে থাকেন। এসইও বিষয়ক জ্ঞানগুলোও থাকা প্রয়োজন একজন ওয়েবডিজাইনারের। কারণ ওয়েবসাইটকে এসইও ফ্রেন্ডলী করে ডিজাইন করা একজন ওয়েবডিজাইনের দায়িত্ব।
এসব বিষয়ে দক্ষ একজন ওয়েবডিজাইনারে বেতন সারাবিশ্বের যেকোন জায়গাতে কিংবা মার্কেটপ্লেসগুলোতে ঘন্টা প্রতি ২০ ডলার হতে ৫০ ডলার হয়ে থাকে, যেখানে একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের বেতন হয়ে থাকে ১০-২০ ডলার/প্রতি ঘন্টা। এ রেট দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে আর ও অনেক বেশি হয়ে থাকে। যেমনঃ একজন ট্যালেন্ট এবং অনেক পরিশ্রমী ওয়েবডেভেলপারের বেতন বাৎসরিক ১০০,০০০ডলার হওয়াটাও অতি স্বাভাবিক ঘটনা।
  • ওয়েবডিজাইনার নাকি ওয়েব ডেভেলপার হব?
এ প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আগে জানা দরকার ওয়েবডিজাইন কিংবা ওয়েবডেভেলপিংয়ের মধ্যে পার্থক্য।

  • ওয়েবডিজাইনঃ ওয়েবসাইটের বাইরের দিকটা যা দেখছেন, অর্থাৎ ডিজাইন, লে-আউট, কালার সব কিছু ওয়েবডিজাইনের মধ্যে পড়ে। আর এজন্য জানা থাকতে হয়, photoshop, html, css, jquery, javascript

  • ওয়েবডেভেলপঃ ওয়েবসাইটটির পিছনে যদি কোন অ্যাপ্লিকেশন থাকে কিংবা ওয়েবসাইটটিরে যে যে অংশটুকু কোডিংকে স্পর্শ ছাড়া পরিবর্তন করা যায়, সেইটুকুই ওয়েবডেভেলাপ।
উদাহরণ দিলে বিষয়টি বোঝা আরও বেশি সহজ হবে। আমরা যে ফেসবুক ব্যবহার করি সেটি দিয়েই বোঝানোর চেষ্টা করি। ফেসবুকের কালার, লেআউট যা দেখতেছি, সেগুলোকে মিলিয়ে বলা যায় ওয়েবডিজাইন। কিন্তু সেখানে রেজিঃ করা, তারপর সেই আইডি দিয়ে লগইন করা, সেখানে যেকোন পোস্ট করছেন নিজের ইচ্ছামত স্ট্যাটাস দিচ্ছেন , কিভাবে ছবি আপলোড করছেন, এ কাজটি হচ্ছে ওয়েবডেভেলাপিং এর কারনে।
ওয়েবডেভেলপিং কাজ করার জন্য জানা থাকতে হবে, php, mysql
  • পার্থক্যটা জেনে গেলাম, এবার চলে আসি আসল প্রশ্নে অর্থাৎ আমি কোনটা হব? ওয়েবডিজাইনার নাকি ওয়েবডেভেলপার?
যেকোন ওয়েবডেভেলপারকে আগে অবশ্যই ওয়েবডিজাইনটা ভালভাবে জানা থাকতে হয়। কিন্তু একজন ওয়েবডিজাইনারের ওয়েবডেভেলপিংয়ের বিষয়ে কোন জ্ঞান থাকার দরকার নাই। অর্থাৎ ওয়েবডিজাইনাররাই পরবর্তীতে তাদের ক্যারিয়ারের উপরের ধাপে যাওয়ার জন্য ওয়েবডেভেলপিংটা শিখে বা শিখতে পারে।
  • কতদিন লাগবে, যদি ওয়েবডিজাইনার কিংবা ওয়েবডেভেলপার হতে চাই?
এ বিষয়টি নির্ভর করে ৩টি বিষয়ের উপর।
১) নিজের পরিশ্রমের পরিমান।
২) সঠিক গাইডলাইন
৩) প্রশিক্ষণের মাধ্যম।


যতবেশি পরিশ্রম করবেন তত দ্রুত শিখতে পারবেন ওয়েবডিজাইনিং সম্পর্কিত কাজ। প্রতিদিন কমপক্ষে ৫-৭ ঘন্টা এ কাজে দেওয়ার জন্য মনমানসিকতা না থাকলে এ সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ার আশাটা ছেড়ে দেওয়া উচিত। যদি আরও বেশি দিতে পারেন, তাহলে অবশ্যই অন্যদের চাইতে বেশি দ্রুত শিখতে পারবেন। তবে এটা বলে নেওয়া উচিত, ওয়েবডিজাইন কিংবা ওয়েবডেভেলপিং শিখার শেষ বলতে কিছু নাই।

এ সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়লে সারাজীবন ধরেই শিখতে হবে। তবে কাজ শুরুর জন্য যেটুকু শিখা দরকার সেটি আশা করা যায়, ৪-৬ মাসের মধ্যেই শিখা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে সময়টা বেড়ে যেতে পারে শিখছেন কিভাবে? যদি এমন হয় আপনি অনলাইন হতে নিজে নিজে শিখতে চাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে হয়ত সময়টা অনেক বেড়ে যাবে। কারও নিজের তত্ত্বাবধানে শিখা উচিত। অনেকেই রয়েছে, যারা নিজেরা কাজ করেননা, শুধু প্রশিক্ষণ দেন, তাদের কাছেও সঠিক গাইডলাইন না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

শেখার জন্য এমন কাউকে বেছে নিন যে নিজেই এধরনের প্রচুর কাজ করার বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে। কোন ট্রেনিং সেন্টারে গিয়ে শিখতে গেলেও তাদের প্রশিক্ষকদের মধ্যে এ গুণটি রয়েছে কিনা সেটি জেনে নিন। সঠিক ব্যক্তির কাছ থেকে সঠিক গাইডলাইন পেয়ে এবং নিজের পরিশ্রম করলে অবশ্যই একজন ভালমানের ওয়েবডেভেলপার হতে পারবেন। তবে এ ৩টি বিষয় থাকার পরও যারা ব্যর্থ হয়েছেন তাদের ব্যর্থতার কারণ খুজতে গিয়ে ৩টি বিষয় খুজে পেয়েছি।
  •  ব্যর্থতার ৩টি কারণঃ
১)  কোডের জটিলতাকে ভয় করাঃ ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে সবসময়ের জটিল কোডের সম্মুখীন হওয়ার জন্য মনপ্রাণ দিয়ে আশা করবেন। ওয়েবডেভেলপিং করতে গিয়ে যতবেশি কোডের জটিলতার সম্মুখীন হবেন, ততবেশি নিজের ভিতর কনফিডেন্ট তৈরি হবে। ওয়েবডেভেলপারদের মনে রাখা দরকার, একজন ওয়েবডেভেলপারদের কাছে অসম্ভব বলতে কিছু নাই। এ বিশ্বাসটা্ ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই  নিজের মধ্যে তৈরি রাখতে হবে। যেটুকু শিখেছি, এর বাইরে কিছু দেখলেই পারা যাবেনা, এ বিশ্বাসটা একজন ওয়েবডেভেলপারের ব্যর্থ ক্যারিয়ারের জন্য অত্যন্ত বেশি দায়ি।

২) খুব বেশি অন্যের উপর নির্ভরশীলঃ একজন ওয়েবডেভেলপারকে সারাজীবনধরেই শিখতে হয়, সেটি আগেই বলেছিলাম। আপনি কারও কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে একটা পযায় পযন্ত যেতে পারেন। কিন্তু বাকি পথটা একা একাই হাটতে হবে। আর সেজন্য প্রচুর পরিমাণ গুগল থেকে সার্চ করে নিজে নিজে শেখার অভ্যাসটা শুরু থেকেই করে নিতে হবে।

৩) রিয়েল লাইফ প্রজেক্ট না করাঃ  যত শিখবেন তার চাইতে বেশি প্রজেক্ট করার চেষ্টা করে যেতে হবে। যতবেশি প্রজেক্ট করবেন, ততবেশি কোডিংয়ের জটিলতার সম্মুখীন হবেন। আর এবিষয়টি আপনাকে ভালমানের ওয়েবডেভেলপার হিসেবে প্রস্তুত করবে। সুতরাং কোডিংয়ের জটিলতা আছে এরকম কাজ করার চেষ্টা করুন প্রচুর পরিমানে। কাছের কারও ওয়েবসাইট ফ্রি ডেভেলপিং করে কিংবা নিজের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট ডেভেলপিং করেও রিয়েল লাইফ প্রজেক্টের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন।

৪) নিজের কাজের পোর্টফলিও না থাকাঃ  কমপক্ষে ৫টি কাজের অভিজ্ঞতা থাকা ছাড়া আসলে চাকুরী খোজলে কিংবা আউটসোর্সিং করতে গেলে কাজ না পাওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশি। এটা শুধু ওয়েবডিজাইন কিংবা ওয়েবডেভেলপিংয়ের ক্ষেত্রেনা। যেকোন সেক্টরের জন্য একই কথা। এ কাজটি আমরা করিনা দেখেই দক্ষ হওয়ার পরও বেশিরভাগ সময়ই বেকার বসে থাকি। শেখার শুরুর দিক থেকেই এদিকটাতেও সবচাইতে বেশি গুরুত্বদিয়ে নজর দেওয়া উচিত। ওয়েবডিজাইনের ক্ষেত্রে একই ধরনের না করে আলাদা আলাদা ধরনের এবং জটিল কোডিংসহ ওয়েবডেভেলপ করে সেগুলোকে কাজের পোর্টফলিও হিসেবে প্রস্তুত করুন।

আশা করি পুরো পোস্টে ভাল কিছু গাইডলাইন দিতে পেরেছি। পুরোটি যদি অনুসরণ না করে অল্প কিছু বাদ দিয়েও অনুসরণ করেন, তাহলে সেটি আপনার জীবনের আরো একটি ব্যর্থ উদ্যোগ হয়েই থাকবে। সঠিকভাবে অনুসরণ করলে ওয়েবডেভেলপিং হচ্ছে ১০০% নিশ্চিত ক্যারিয়ার, আয়ের পরিমাণটাও অনেক বেশি।



0 comments:

Post a Comment