হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন : নবী করীম সা. ইরশাদ ফরমান, আমি জান্নাতের এমন কোন দৃষ্টান্ত দেখি নাই যার আকাংখী শুয়ে থাকে। আর না আমি জাহান্নামের এমন দৃষ্টান্ত দেখেছি যে উহা থেকে আত্মরক্ষাকারী শুয়ে আছে।
হযরত উমর রা. বলেন, জনাব নবী করীম সা. এরশাদ ফরমান, জান্নাতে সে ব্যক্তিই প্রবেশ করবে যে উহার আশা করে। [কানযুল উম্মাল]
জান্নাতে বিশ্বাস করা ফরজ
হযরত উমর ইবনে খাত্তাব রা. বলেন, একদা আমরা নবী করীম সা. এর দরবারে বসা ছিলাম এমন সময় এক ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে আরজ করল ইয়া রাসূলাল্লাহ সা.! ঈমান কি জিনিস?
হুজুর সা. বললেন : আল্লাহর প্রতি, তার ফেরেস্তাগণের প্রতি, তার কিতাবসমূহের প্রতি, তার রাসূলগণের প্রতি, মৃত্যুর উপর, মৃত্যুর পর জীবিত হওয়ার উপর, হিসাব নিকাশের উপর, জান্নাতের উপর, দোযখের উপর, প্রতিটি ভাল মন্দের তাক্বদীরের উপর বিশ্বাস রাখা। [মুসলিম ১/৩৮]
জান্নাতীদের জান্নাত কামনা
জান্নাতের অধিকারী লোকেরা জান্নাত কামনায় তারা আল্লাহ পাকের কাছে এভাবে আবেদন করবেন, যেমন আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন: হে আমাদের পালনকর্তা আমদেরকে তা দাও যা তুমি ওয়াদা করেছো তোমার রসূলগণের মাধ্যমে এবং কিয়ামতের দিন তুমি আমাদিগকে অপমানিত করোনা নিশ্চই তুমি ওয়াদা খেলাফ করোনা। [ইমরান -১৯৪]
জান্নাত কামনাকারীর পুরুস্কার
হযরত আনাস ইবনে মালেক করবে।লেন, নবী করীম সা. এরশাদ করেন- যদি কোন মুসলমান আল্লাহ তাআলার নিকট তিনবার জান্নাতের আবেদন করে, জান্নাত তখন বলে, হে আল্লাহ ! তাকে জান্নাতে প্রবেশ করে দিন। আর যে ব্যাক্তি তিনবার জাহান্নাম থেকে মুক্তি চায় জাহান্নাম তখন বলে, হে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন। [তিরমিযী হা.২৫৭২, ইবনে মাজা হা.৪৩৪০]
অন্য হাদীসে হযরত আবু হুরায়রা রা. এর বর্ণনায় আছে, যে ব্যাক্তি সাত বার বলে আমি আল্লাহ পাকের নিকট জান্নাত কামনা করি। তখন জান্নাত বলে হে আল্লাহ তাকে জান্নাত প্রদান করুন। [আবু নাঈম১/৯৮]
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে একটি হাদীস বর্ণিত আছে যে, এতে নবী করীম সা. এরশাদ করেন , আল্লাহর নিকট প্রচুর পরিমানে জান্নাত কামনা করো এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাও। কেননা জান্নাত জাহান্নাম উভয়েই শাফায়াত করে। এবং তাদের শাফায়াত কবুল করা হবে নিঃসন্দেহে। কোন বান্দা যখন আল্লাহর নিকট বার বার জান্নাত চাইতে থাকে তখন জান্নাত বলে হে পরওয়ারদিগার আপনার নিকট আমাকে কামনা করা হয়েছে। আপনি তাকে আমার মধ্যে অবস্থানের সুযোগ দিন। এ রকম জাহান্নামও বলে। [নেহায়া, ইবনে কাছীর, ২/৫০১]
আল্লাহর ব্যবসার পুঁজি খুবই মূল্যবান
হযরত আবু হুরায়রা রা. মারফু বর্ণনায় বলেন, নবী পাক সা. এরশাদ ফরমান: যে ব্যাক্তি পরকালীন মানযিলসমূহকে ভয় করে, সে ব্যাক্তি যেন ইবাদত করে পরকালে ভ্রমণ করে। যে ব্যাক্তি রাতে ভ্রমণ করে সে তার গন্তব্য স্থানে চলে যায়, শুনে রেখো আল্লাহ পাকের ব্যবসার পুঁজি অনেক মূল্যবান। আরো শুনে রেআমল যে, আল্লাহ পাকের ব্যবসার মালামাল হলো জান্নাত। [আবু নাঈম]
সাধ্যমত জান্নাত অন্বেষণ কর
হযরত কালীব ইবনে জারীর রা. বলেন, আমি নবী সা. কে বলতে শুনেছি, নিজেদের সাধ্যমত সাধনা করে জান্নাত অন্বেষণ কর এবং যথাসাধ্য চেষ্টা করে জাহান্নাম থেকে বেচে থাক। কেননা জান্নাতের অন্বেষণকারীর ঘুমানো উচিত নয়। আর দোযখ থেকে আত্মরক্ষাকারীরও শুয়ে থাকা উচিত হবে না। নিঃসন্দেহে আখেরাত আজ অপসন্দনীয় বস্তুর মধ্যে লুকিয়ে আছে। আর দুনিয়া সাধের এবং খাহেশের ডাস্টবিন। সাবধান তোমরা পরকাল থেকে গাফেল থেকোনা। [নেহায়া, ইবনে কাছীর ২/৫০২]
আল্লাহ পাকের সাহায্য চেয়ে জান্নাত কামনা কর
হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. বলেন, নবী কারীম সা. ইরশাদ ফরমানÑ আল্লাহ পাকের সাহায্য চেয়ে কেবল জান্নাতই কামনা করো। [ইবনে কাছীর ২/৫০২]
দুটি বড় জিনিসকে ভুলে যেওনা
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. নবী করীম সা. এর কাছ থেকে শ্রবণ করেছেন। নবী করীম সা. ইরশাদ ফরমান, তোমরা বৃহৎ দুটি জিনিস ভুলে যেওনা। আমরা জিজ্ঞেস করলাম দুটি বৃহৎ জিনিস কি? ইয়া রাসূলুল্লাহ। হুজুর সা. উত্তর দিলেন জান্নাত ও জাহান্নাম। [তারগীব ও তারহীব ৪/৪৫৭]
হযরত আব্দুল মালেক ইবনে আবু বাশির রা. বর্ণনা করেন, নবী করীম সা. ইরশাদ করছেন, এমন কোন দিন যায়না যে, জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়ে প্রশ্ন করেনা। জান্নাত বলে হে আমার প্রতিপালক, হে আমার পরওয়ারদিগার। আমার ফল তৈরি, আমার নহর সমূহ প্রবাহমান, আমি আমার আশা পূর্ণ করতে চাই। সুতরাং আমার মধ্যে যারা বসবাস করবে তাদেরকে অতি সত্তর পাঠিয়ে দাও।জান্নাত জাহান্নামের দাবী
কুলসুম ইবনে আয়াজের ওয়াজ
ইমাম ইবনে কাসীর রহ. বলেন, হযরত কুলসুম ইবনে আয়াজ কুসাইরী রহ. বাদশা হিশাম ইবনে আবদুল মালিকের শাসনামলে দামেশকের মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, যে ব্যাক্তি তার মনের খাহেশ ছেড়ে আল্লাহ পাকের বিধনাবলির মর্যাদা দেয়, আল্লাহ পাকও তাকে মর্যাদা দিয়ে থাকেন। আল্লাহ পাক সে বান্দার উপর করুণা করে, যে ব্যাক্তি আল্লাহ তাআলার নেয়ামতের সাথে তার আনুগত্যের সাহায্য কামনা করে। আর এই নেয়ামতের মাধ্যমে পাপের সাহায্য গ্রহণ না করে। কেননা জান্নাতি লোকের এমন কোন সময় আসবেনা যে, এতে নেয়ামতের আধিক্য বৃদ্ধি পায় না। ইহা কিভাবে বৃদ্ধি পায় তা নেয়ামতপ্রাপ্ত ব্যক্তি টেরও পায়না। তেমনিভাবে শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যাক্তির এমন সময় আসেনা যে সেও শাস্তিকে নতুন মনে করেনা, আর সেও তা জানেনা।
আকাবিরদেরদের আমল
হাফিজ ইবনে কায়্যিম রহ. বলেন মহান পূর্বসূরিগণ আল্লাহর নিকট জান্নাত কামনা করতেন না। বরং তারা বলতেন যে, আমাদের জন্য তাই যথেষ্ট যে, তিনি আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন।
মনের অপছন্দের কাজ কর্মের আড়ালে রয়েছে জান্নাত
হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. ইরশাদ করেন, জান্নাত নফসের অপছন্দনীয় বস্তুর অন্তরালে রাখা হয়েছে, আর জাহান্নাম প্রবৃত্তির পছন্দের অন্তরালে অদৃশ্য রাখা হয়েছে।
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা. ইরশাদ করেন- আল্লাহ তাআলা যখন জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করলেন তখন হযরত জিবরাঈল আ. কে প্রেরণ করে বলেন যে, তুমি জান্নাত দেখ এবং এর অধিবসীদের জন্য যা কিছু সৃষ্টি করা হয়েছে তাও লক্ষ্য কর।
তখন জিবরাঈল আ. আগমন করলেন এবং জান্নাত দেখলেন, এর অধিবাসীদের জন্য যা সৃষ্টি করা হয়েছে তাও দেখলেন। তারপর তিনি আল্লাহ তাআলার নিকট ফিরে গিয়ে নিবেদন করলেন, আপনার শ্রেষ্ঠত্বের কসম, যে ব্যাক্তি জান্নাতের কথা শুনবে সেই এতে প্রবেশ করতে চাইবে।
আল্লাহ তাআলা তখন জান্নাতকে হুকুম করলেন তুমি সে অপছন্দনীয় কর্মসমূহের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যাও। আল্লাহ তাআলা হযরত জিবরাঈল আ. কে আবার বললেন, এখন আবার যাও এবং দেখ আর এর মধ্যে বসবাসকারীদের জন্য যা কিছু তৈরি করা হয়েছে সেগুলোও দেখ। হুজুর সা. বলেন, হযরত জিবরাঈল আ. আবার গেলেন এবং দেখলেন যে, অপছন্দনীয় কাজগুলোর মধ্যে ইহা ডুবে আছে। তিনি ফেরত এসে বললেন, আপনার মহত্ত্বের কসম আমি ভয় করছি যে, এতে কেউই প্রবেশ করতে পারবেনা। এবার আল্লাহ তাআলা আবার তাকে জাহান্নামের দিকে যেতে এবং তা দেখতে বললেন, আর আল্লাহ তাআলা জাহান্নামীদের জন্য যা কিছু তৈরি করেছি তাও দেখতে বললেন।
হযরত জিবরাঈল আ. জাহান্নামিদের জন্য যা কিছু তৈরি করা হয়েছে সবই দেখলেন, এতে তিনি এমন বস্তুও দেখলেন যে এর একটি অংশ অপর অংশের মধ্যে চড়ে বসেছিল। জিবরাঈল আ. ফেরত এসে বললেন, আপনার শেষ্ঠত্বের কসম, যে ব্যাক্তি এর কথা শ্রবণ করবে সে এতে প্রবেশ করতে চাইবেনা। আল্লাহ পাকের আদেশে মনের ইচ্ছাও প্রবৃত্তির মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল জাহান্নাম। তারপর জিবরাঈল আ. যখন জাহান্নামের দিকে আবার ফিরে দেখলেন তখন আরজ করলেন, আপনার শ্রেষ্ঠত্বের কসম আমার পুরাপুরি ভয় হচ্ছে যে, এ থেকে কেউই মুক্তি পাবে না। সকলেই এতে প্রবেশ করবে।
0 comments:
Post a Comment